চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি বিলুপ্তির পর দলের তৃণমূলে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা এবং গুঞ্জন চলছে। দলের হাই কমান্ডের উপর আস্থা রেখে কারা আসবেন নতুন নেতৃত্বে, এবং তারা কীভাবে দলের ভেতরের পরিস্থিতি সামাল দেবেন—এসব প্রশ্ন এখন কর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্তের পর থেকেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। নতুন কমিটি যেকোনো মুহূর্তে ঘোষণা হতে পারে, তাই নেতা হওয়ার দৌড়ে প্রার্থীরা ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ছুটছেন এবং তাদের সমর্থন লাভের চেষ্টা করছেন। বর্তমানে সভাপতির পদ এবং সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিবের পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম নিয়ে দলীয় মহলে নানা আলোচনা চলছে।
এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বেশ সমালোচনায় রয়েছে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিমঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব এডভোকেট এম.লোকমান শাহ্ । দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হতে চান তিনি।
সাধারণ সম্পাদক পদে ইচ্ছুক এম.লোকমান শাহ
বলেন,দক্ষিণ জেলা বিএনপির যোগ্য নেতৃত্ব এখন সময়ের দাবি। নিজেকে সৎ, যোগ্য ও দায়িত্বশীল দাবি করে বলেন,আমি ছাত্রজীবন থেকে সততার সঙ্গে রাজনীতি করে যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছি। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি,মাদক এবং ক্যাসিনোর সঙ্গে কখনও নিজেকে জড়াইনি।
নিজের কাছে আপনি যোগ্য প্রার্থী কিনা; এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,তৎকালীন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আমলে রাজনৈতিক দৃশ্যপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। আন্দোলন সংগ্রামকে কেন্দ্র করে কারাভোগ করতে হয় বিএনপি’র অনেক নেতা কর্মীকে। সে সময়ে দুইবার কারাগারে বন্দী ছিলাম আমিও। দেশের বর্তমান বিএনপি’র রাজনৈতিক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। দলের হাইকমান্ডের নেতৃবৃন্দ ক্লুিন ইমেজের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খুঁজছেন;
আমি মনে করি প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমি যোগ্য। দলের দুঃসময়ে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ভূমিকা রেখেছি। এখনও দলকে সু-সংগঠিত করতে ও একজন আইনজীবী হিসেবে দলের নেতাকর্মীদের পাশে থেকে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমি কারাভোগ করেছি। সে হিসেবে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতেই পারি।
সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হলে আপনার পরিকল্পনা কী; জানতে চাইতে তিনি বলেন, নন্দিত জননেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা মোতাবেক জেলা বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে চাই।
কমিটিতে রাজপথের কর্মীদের প্রাধান্য দেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন,থানা,উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায় থেকে সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে গঠন করতে চাই। নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বিএনপি পরিবারের সন্তান এমন ব্যক্তি হতে হবে।
ছাত্রজীবণ থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন লোকমান শাহ;আনোয়ারা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক,দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিমঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ চট্টগ্রামের দলের কর্মসূচি চলাকালীন পুলিশ বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে নির্যাতনের শিকার হন তিনি। পরবর্তীতে আবারো ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশে যাওয়ার পথে গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘ ৩৮ দিন কারাবন্দী থাকার পর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে মুক্তি পান তিনি।
দলের তৃণমূল কর্মীরা চান, নতুন নেতৃত্বে আসুক এমন কেউ যিনি সত্যিকারের দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাসিন্দা এবং যারা বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। দলের কর্মীদের মতে, অতীতে যারা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদেরই নেতৃত্বে আসা উচিত। তারা মনে করেন, বিতর্কিত বা হাইব্রিড নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করলে তা তৃণমূলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না এবং দলের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে, যেখানে জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি এবং শেখ মো. মহিউদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। এরপর ২০১১ সালে পুনর্গঠন করা হয় এবং জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি এবং গাজী শাহজাহান জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এই কমিটি দীর্ঘ আট বছর পাঁচ মাস দায়িত্ব পালন করার পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে বিলুপ্ত করা হয়।
এরপর, ২০২৩ সালের ৭ মে বিলুপ্ত কমিটির ৪ নং সদস্য এনামুল হক এনামকে ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। তবে এস আলম গ্রুপের গাড়ি সরিয়ে নেয়ার অভিযোগে এনাম তার প্রাথমিক সদস্য পদ হারান, যার ফলে সম্ভাব্য কমিটিতে তার জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায়।
বর্তমানে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নতুন নেতৃত্ব কেমন হবে, তা নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। দলের হাই কমান্ড কাদের উপর আস্থা রাখবে এবং নতুন নেতৃত্ব কীভাবে দলের সংকট মোকাবেলা করবে, তা আগামী দিনের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। তৃণমূলের প্রত্যাশা, নতুন নেতৃত্ব দলের জন্য সঠিক পথ নির্দেশ করবে এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের রাজনীতিতে বিএনপিকে আরও শক্তিশালী করবে।